কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগ
জীববৈচিত্র্য-বনভূমি রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ফুলছড়ি রেঞ্জ

তাহজীবুল আনাম
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৫:২৬

প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ ফুলছড়ি রেঞ্জের বনভূমি রক্ষায় দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ছবি: প্রতিনিধি
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এবং জবরদখলপ্রবণ এলাকা ফুলছড়ি রেঞ্জ। পাঁচটি বিট নিয়ে ফুলছড়ি রেঞ্জ অফিস গঠিত। এই রেঞ্জে সংরক্ষিত বনভূমির পরিমাণ ৯১০৩ একর এবং রক্ষিত বনভূমি ৮৩৫ একর। অতি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ বৃহৎ এই রেঞ্জের বনভূমি রক্ষার দায়িত্বে আছেন মাত্র ১৮ জন কর্মকর্তা- কর্মচারী। স্বল্প জনবল নিয়ে কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক সময় ভূমিদস্যুদের টার্গেটে পড়ে হামলার শিকার হন বন কর্মকর্তারা।
ফুলছড়ি রেঞ্জ অফিসার মো. হুমায়ুন আহমেদ জানান, ফুলছড়ি রেঞ্জের প্রতিটি বিট অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং জবরদখল প্রবণ এরিয়া । আমাদের স্বল্প জনবল দিয়ে এই বৃহৎ এলাকা কাভার করা অনেক কষ্টসাধ্য কাজ। ফুলছড়ি রেঞ্জকে বন বিভাগের শাস্তিমূলক পোস্টিং বলা হয়। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে আমি দায়িত্ব নেয়ার ১ বছর ৫ মাসে জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে এসেছি। গত দেড় বছরে আমার রেঞ্জের আওতাধীন পাঁচ বিটে ১১৩ টি পিওআর মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ৫০ মামলা জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে, গাছ কাটার অপরাধে মামলা ৩৯ টি এবং পাহাড় কাটা মামলা রয়েছে ২২ টি। এছাড়া পাগলির বিল ও খুটাখালীতে বালি উত্তোলনের অপরাধে ড্রেজারমেশিন জব্দসহ ৬ টি পিওআর মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় অনেক আসামি গ্রেফতার হয়েছেন। এছাড়া গত দেড় বছরে ৭৮ একর বনভূমি জবরদখল মুক্ত করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রেঞ্জ অফিসার হুমায়ুন আহমেদ দায়িত্ব নেয়ার পর এলাকায় পাহাড় কাটা, গাছ কাটা, বালি উত্তোলন অনেকটা কমে এসেছে। বড় এলাকা ও বৃক্ষ সমৃদ্ধ হওয়ায় এখানে কাজ করা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। ভূমিদস্যুদের মোকাবিলা করতে গিয়ে অনেকসময় বন কর্মীদের উপর হামলার ঘটনাও ঘটে। প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে এখানে টিকে থাকতে হয়।
ফুলছড়ি রেঞ্জ অফিস সুত্রে জানা যায়, মেধা কচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান ফুলছড়ি রেঞ্জে অবস্থিত। এই বনটি তার সুবিশাল মাদার গর্জন গাছের জন্য সুপরিচিত। এখানে রয়েছে শতশত প্রাচীন বৃক্ষ। এসব বড় বৃক্ষের অধিকাংশের বয়স শত বছরেরও বেশি। মেধা কচ্ছপিয়া একটি প্রাকৃতিক বন। ২০০৪ সালে উদ্যানটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষিত হয়। এই জাতীয় উদ্যানের আয়তন প্রায় ৩৯৫.৯২ হেক্টর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর এই উদ্যানে প্রতিদিন শতশত পর্যটক ঘুরতে আসেন।
১৫ অক্টোবর সরেজমিনে গিয়ে ফুলছড়ি রেঞ্জের ফুলছড়ি বিট ও খুটাখালী বিটে দেখা যায়, সেখানে সুফল প্রকল্পের জন্যে বরাদ্দকৃত ২৪০ হেক্টর জমিতে বনায়ন সৃজন করা হয়েছে। বাগানে রয়েছে নানা প্রজাতির চারা। যেমন, আমলকী, শিমুল, হরতকি, গর্জন, ডাকিজাম, কদম, জারুল, শিল কড়ই, ছাতিয়ান, বকুল, তেতুল, জলপাই, তেলসুর, কৃষ্ণচূড়াসহ হরেক রকমের বৃক্ষ। ন্যাড়া পাহাড়ের চূড়ায় এই বাগান সৃজন হওয়ায় চারপাশ সবুজে ছেয়ে গেছে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন একখন্ড বৃক্ষমালা নতুন প্রাণের স্পন্দনে স্বাগত জানাচ্ছে।